পাহাড়সম অভিযোগ উঠেছে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কেন্দ্রিয় বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে ক্ষেপেছেন করপোরেশনের বেশিরভাগ কাউন্সিলর। এনিয়ে দফায় দফায় গোপন বৈঠক করেছেন। তারা জোট বেধেছেন মেয়র আরিফের অপসারনের দাবীতে। স্বেচ্ছাচারিতা, উন্নয়ন কাজে নিজস্ব ঠিকাদারের সাথে আঁতাত, অনিয়মন, নাগরিক অধিকার লঙ্গন করে উন্নয়ন কাজের নামে দূভোর্গ সহ একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তারের ঘটনায় তার উপর দীর্ঘদিন ধরে ক্ষুব্ধ কাউন্সিলররা। এরই ধারাবাহিতকতায় মেয়র আরিফের অপরসারপত্রে স্বাক্ষর করেছেন তারা। স্বাক্ষরিত ফাইল এখন মন্ত্রনালয়ের টেবিলে যাচ্ছে। আজ বুধবার (০৪ মার্চ) দুপুরে তাদের স্বাক্ষরিত অভিযোগপত্র সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
কাউন্সিলরদের পক্ষে সিসিকের ২৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌফিক বকস লিপন স্বাক্ষরিত অভিযোগের অনুলিপি প্রেরণ করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রী, স্থানীয় সরকার সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও মেয়রের একান্ত সচিব বরাবরে। মেয়রের অপসারণ দাবিতে লিখিত অভিযোগ পত্রে স্বাক্ষর করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের ১০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. তারেক উদ্দিন তাজ, ৩র্ন ওয়ার্ডের এ কে এম লায়েক, ২০ নং ওয়ার্ডের আজাদুর রহমান আজাদ, ১৩ নং ওয়ার্ডের শান্তনু দত্ত শন্তু, ২৫ নং ওয়ার্ডের তাকবিরুল ইসলাম পিন্টু, ১৪ নং ওয়ার্ডের নজরুল ইসলাম মুনিম, ১৬ নং ওয়ার্ডের আব্দুল মুহিত জাবেদ, ১নং ওয়ার্ডের সৈয়দ তৌহিদুল হাদী, ২১ নং ওয়ার্ডের আব্দুরন রকিব তুহিন, ১৫ নং ওয়ার্ডের ছয়ফুল আমিন বাকের, ৬ নং ওয়ার্ডের ফরহাদ চৌধুরী শামীম, ২৩ নং ওয়ার্ডের মোস্তাক আহমদ, ৯ নং ওয়ার্ডের মখলিছুর রহমান কামরান, ১৯ নং ওয়ার্ডের এসএম শওকত আমিন তৌহিদ, ৮ নং ওয়ার্ডের ইলিয়াছুর রহমান, ১১ নং ওয়ার্ডের রকিবুল ইসলাম ঝলক, ১২ নং ওয়ার্ডের সিকন্দর আলী, সংরক্ষিত-৪ নং ওয়ার্ডের মাসুদা সুলতানা, সংরক্ষিত-৭ নং ওয়ার্ডের নাজনীন আক্তার কনা, সংরক্ষিত-৮ নং ওয়ার্ডের রেবেকা আক্তার লাকি। অভিযোগে তারা উল্লেখ করেছেন- বাংলাদেশ সরকার যখন স্বচ্ছতা, জবাবদিহীতা, সবার অংশগ্রহণে জনকল্যাণমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করার নির্দেশনা প্রদান করেছেন, তখনই লক্ষ্য করা গেছে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সাধারণ সভায় উপস্থাপন ও আলোচনা না করে বর্তমান পরিষদকে উপেক্ষা করে পরিষদের সিদ্ধান্ত ছাড়াই দক্ষিণ সুরমা এলাকার তেঁতলী ইউনিয়নের বানেশ্বরপুর মৌজায় জায়গা অধিগ্রহণ করেছেন। তাছাড়া সিলেট সিটি করপোরেশনের জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করে বড় অংকের উৎকোচ নিয়ে নিজস্ব লোক বিভিন্ন শাখায় লোক নিয়োগ করেছেন। তার ব্যক্তিগত বৃহৎ স্বার্থে সিটি করপোরেশনের স্বার্থ ক্ষুদ্র করে কাজে আসে না, এমন অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন। বিভিন্ন এলাকায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান থেকে বিল পাওয়ার ক্ষেত্রে হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার মাধ্যমে কমিশন বাণিজ্য করেন, এমনকি ঠিকাদারদের সাথে লিয়াঁজো রক্ষায় নিজস্ব একাধিক ঠিকাদার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রন করেন গোপনে তিনি। যা সিটি করপোরেশনের আইন ও বিধিমালার ধারা-১৩ এর উপধারা ১ (ঘ) অনুসারে মেয়র পদে থেকে অপসারণ যোগ্য অপরাধ। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বিষয়টি তদন্ত পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক। বিষয়টি বিবেচনা পূর্বক তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ কর্তৃপক্ষ মেয়রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান তারা। কাউন্সিলররা আরো জানান, গত দু’দিন আগে মেয়র অপসারণের বিষয়ে একমতে পৌছতে তারা বেশ কয়েকবার বৈঠকে মিলিত হন। অনেকটা গোপনে বৈঠকে মিলিত হয়ে ঐক্যমতের পর এবার প্রকাশ্যে আসছেন তারা। অভিযোগকারী কাউন্সিলরদের অনেকে বলেন, আপাতত আমরা অভিযোগ দিচ্ছি। পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলন করে মেয়রের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বিষয় তুলে ধরবো। অভিযোগে স্বাক্ষরকারী সিসিকের কাউন্সিলররা জানান, পরিষদকে না জানিয়ে তেঁতলী ইউনিয়নের বানেশ্বপুর মৌজায় ২৭ কেদার (৪১০ শতক) ২০ শতক ভূমি ২৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা অধিগ্রহণ ব্যয় দেখিয়েছেন মেয়র। কিন্তু তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ওই টাকায় ৩ ভাগের একভাগ টাকা দিয়ে ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। এছাড়া ৫০ জনের স্থলে আড়াইশ’ পরিচ্ছন্ন কর্মীর বেতন তুলে আত্মসাত করা হচ্ছে। এসব অভিযোগের বাইরেও মেয়র নিজের মেয়েকে সিসিকের একটি প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে রেখেছেন মোটা অংকের বিনিময়ে। আর ডে লেবারদের এপিএস, পিএস করে বিদেশে পাঠিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা। তারা বলেন, এই অভিযোগ বুধবার দুপুরে সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়।